কবিতা


 আয়ুষ্মান   

                                                                পার্থজিৎ ঘোষ
স্বপ্নপুরি মিথ্যে নাকি?
মাথার উপর আকাশ খোলা!
মুচকি হাসে একফালি চাঁদ
ভাসিয়ে দিয়ে মেঘের ভেলা !

প্রখর তেজের  সূর্য্যিমামা
নিত্য যিনি আপনভোলা!
দীপের শিখা নিভল যবে,
আভিমানের দরজা খোলা!

শিশির ভেজা ঘাসের ডগায়,
খোকন সোনার বর্ণমালা! 
স্বপ্নপুরির পথ-ভিকিরির
হারিয়ে গেছে ভাতের থালা!





সব হারিয়ে
                                    পার্থজিৎ ঘোষ
এবার আগুন লাগুক,
ঝরে যাক সব পাতা
হাড় জিরজিরে পৃথিবীটা পুড়ে হোক
আস্ত শ্মশান !
জয়ী হোক পারমাণবিক অহংকার
উড়িয়ে আণবিক ধুলো !
পুড়ে ছাই হোক সবকিছু –
আমার দীর্ঘ নিশ্বাস, আমার আশার
নবান্নের পোড়া হবিষ্যি –
আমার হারিয়ে যাওয়া ভাতঘুম,
আমার ফেলে আসা গোল্লাছুট !!!

আকাশটা জুড়ে কালো ধোঁয়া,
বাড়ছে বাড়ুক –
তাতে কার কি?

আমারও কিছু যায় আসে না!
তাই আগুন লাগুক,
ঝরে যাক সব পাতা!

নোটে গাছটি মুড়িয়ে গেলে, দেখো,
শিশুটির যেন ঘুম পায়!
দুস্বপ্ন দেখে যেন আঁতবমি না করে,
মুখ দিয়ে রক্ত উঠে যেন মারা না যা
আমার গাদ্দি খেলার মাঠটা এখন ওরই

তাই, একটা আনুরোধ!
পারলে একটা গোপন গুহায়
শিশুটাকে লুকিয়ে রেখো –
এই আস্ত পৃথিবীর পোড়া ছাই
ওকেই তো সরাতে হবে,
খুজে পেতে আমার ফেলে যাওয়া
তার গাদ্দি খেলার মাঠ !!!






যদি একবার 
                                      - পার্থজিৎ ঘোষ
একবারও যদি অন্তর হতে শুনি - 
'ভালবাসি', বা, 'ঘৃণা করি', 
তবে মেনে নেওয়া যায় 
সব পরাজয়! 
দশ দিক,  দিশাহীন, 
কুয়াশায় ঢাকা 
সব প্রান্তর।

দূরদেশ হতে, 
ভেসে-ভেসে আসে 
আধপোড়া মানুষের গন্ধ। 
আতরের ঘ্রানে 
যারা মজে আছে - 
পারবে কি খুঁজে দিতে 
পারিজাত-সুখ, শিশু-উদ্যানে, 
সিরিয়ার বুকে? 
যেথা ছলছল চোখে  
ক্ষীণতনু জীর্ণানি শিশু 
না জানি, কি বোলে 
'মা' 'মা' বলে ডাকে। 
বধিরা জননী শুনতে না পায়!

না জানি, কত কাল ধরে, 
তৃষিত চাতক-তরবারি 
আছে ওঁত পেতে 
ধর্মযুদ্ধে রক্ত-স্নানের লালসায়! 
সে কি শাশ্বত? 
না কি ভ্রম? 
না কি উন্মাদনা? 
না কি প্রলয়ের সঙ্কেত? 
যায় হোক সে - 
যদি একবারও শুনি - 
'ভালবাসি', বা, 'ঘৃণা করি', 
তবে মেনে নেওয়া যায় 
সব পরাজয়!

, কে চলে যায়, 
মুখ ঢেকে, কে সে নারী? 
সে কি মা - 
শুধুই, অর্জুন জননী? 
না কি জননীর বেশে 
চির হতভাগিনী? 
ইতিহাস পাতা গুনে যায়! 
তবু, যেই হোক সে - 
যদি একবারও শুনি - 
'ভালবাসি', বা, 'ঘৃণা করি', 
তবে মেনে নেওয়া যায় 
সব পরাজয়!



মনখারাপের বিকেল
                          পার্থজিৎ ঘোষ
মনখারাপের বিকেলবেলায়
বাদলা-কালো সন্ধ্যে এলে ,  
কাঙাল বুক হাতড়ে মরে ,  
ঝাপসা আলোয় – সর্বহারা ,   
তিলোত্তমা প্রেম-পিরীতি !
                                      
নরম গালে আলতো ছোঁওয়া ,  
একটু ছিল অনেক পাওয়া ;  
হারিয়ে যাওয়া সুরের মতন  
অভিমানী স্মৃতিচারণ, বদভ্যাসে !
আচম্বিতে ছন্দপতন
বিদ্রূপে তাই দুঃখবিলাস !

মনখারাপের বিকেলবেলায়
সন্ধ্যে ফেলে রাত্রি এলে,  
নিশুত রাতে ভেক জেগে রয় ;
ভাত ঘুমেতে নিঝুম শহর,
শহরতলি খুব অচেনা !   

বুকের ভেতর ফোস্কা পোড়া
মন আগুনের বারুদ বিষে ,
ঝলসে ওঠে অন্ধ-গলি,
আর্তনাদে , হরল্লাসে !
ফুঁপিয়ে কাঁদে স্তব্ধ সময়
চেনা আকাশ খুব ফ্যাকাসে !

মনখারাপের বিকেলবেলায়
রাত্রি শেষে ধূসর সকাল –
মেঘ করেছে সূর্যলোকে ।
ভিনদেশতে ছদ্মবেশে
মুক লুকলো দিনের আলো !


মন্ত্র-বলে যন্ত্র চলে –
হূক্কাহূয়া কূচকাআওয়াজ,
ঘুণধরা সব পলকা পাঁজর
সরস্বতী অ্যাড্রেনালীন !
মেট্রো হাটে অনেক দামে
বিকিয়ে যাওয়া দুপুর রোদ !





স্রোতশ্রিনী
                                পার্থজিৎ ঘোষ
বালিয়াড়িসম মুক্ত প্রান –
গভীরে-গহীনে; স্নিক্ত স্তনরস
চুষে খায়; চোষ্য ধরাতল   
শিশু ক্যাকটাসও কণ্টক ফুল,
অস্নিগ্ধ মরুজন্মা !

থেমে রয় নাই নিঃশেষও –
উল্লাস, শীৎকার, আর্তনাদ,
ভয়ঙ্কর ভেসে যায় বাতাসে
হেসে খেলে ভিন দেশে
স্বদেশে!

শঙ্খচিল ভীরু দুন্দুভি গায়,
শিশু চেয়ে রয় আবেশে ।
চুমু দিয়ে যায় শঙ্খিনী মেঘ
দেবদারু তরু গায় হরষে
বেলাশেষের  অভিসারী গান

যেন বাতায়নে বসে, আনমনে  
একলা এলোকেশী , কানু-প্রেমে
সকল-ই  হারায়!
সময়ের প্রেমে , হায় !
দিশাহীন  স্রোতশ্রিনী 
বয়ে চলে কলকল । 

  


                                             
পার্থজিৎ ঘোষ
তুমি আছো, তাই স্পর্ধা এত!
তুমি আছো, তাই ভয় আরও বেশি!
তুমি আছো, সবে ধন নীলমণি,
ছাই ফেলতে ভাঙাকুলো,
শর্মামশাই, হাতের পাঁচ!

তুমি আছো, তাই এত বুকের পাটা!
তাই, স্বপ্ন দেখা;
আছে ছেঁড়া কাঁথা, লাখ টাকা!
আছে জঙ্গলমহল, কামদুনি,
আছে মোর্চা-মিছিল;
দুর্গাপূজো, বলীর পাঁঠা;
ইলশেগুঁড়ি, ইলিশভাপা;
মাটির প্রদীপ, ছোট্ট কুঁড়ে;
শিশুর হাসি; অন্ধ প্রণয়!

তুমি আছো, স্কুলব্যাগে তাই কুতুবমিনার!
তাই তো আরও পঠন পাঠন,
তাই তো আরও জানতে চাওয়া!
খবরকাগজ, ড্রয়িংরুম;
দু'টো বালিশ এক পৃথিবী;
নীলমশারি গোলোকধাঁধা,
পাশবালিশে -দেশ -দেশ,
রক্তলাগা বম্বে ডাইং!

তুমি আছো, তাই গাঁয়ের বধূর তুলসীতলা!
আঁচল কাঠি; মা শীতলা,
লক্ষ্মী-পাচাল; গাজনতলা;
ঢাকের কাঠি; শুকনো মাঠ;
খরার ফসল, বাড়ন্ত ভাত!
লুঙ্গিছেঁড়া, তাপ্পি মারা;
আসছে বছর ফের সুনামী;
ফি-বছরে লাগলে ভোট
বাগদী-বামুন পুংতিভোজ,
ঘোলাজলে জিওল মাছ,
শিঙ্ঘি বিঁধে কাঁকড়াবিছে;
গোপালপুরের সেই মেয়েটা
ফিরলে ঘরে আর নেবে না;
বিক্রি আছে পটল মুলো,
ঢ্যাঁড়শ-কচু ; নপুংসক!

তুমি আছো, তাই স্পর্ধা এত!
তুমি আছো, তাই ভয় আরও বেশি!